আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লিবিয়ার সাবেক নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফীর ছেলে সাইফ আল-ইসলাম গাদ্দাফী চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা এসেছে। আর এর পরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে দেশটিতে।
প্রতিবেশী দেশ তিউনিসিয়ায় গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাইফ গাদ্দাফীর মুখপাত্র আয়মান বোরাস এ ঘোষণা দেন। এসময় তিনি সাইফ গাদ্দাফীর ভিশন ”লিবিয়া রাষ্ট্রের পূণঃপ্রতিষ্ঠা এবং একে সবার দেশে পরিণত করার” রুপরেখা তুলে ধরেন।
বলে রাখা ভালো যে, ২০১৭ সালের জুন মাসে কারাগার থেকে ছাড়া পান সাইফ। তারপর থেকে তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন – কেউ জানে না। এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর মুখপাত্র বোরাস দাবি করেন যে সাইফ গাদ্দাফী লিবিয়াতেই আছেন এবং তিনি রাজনীতিতে নামতে প্রস্তুত।
সাইফ গাদ্দাফী রাজনীতিতে নামতে প্রস্তুত – বোরাসের এ ঘোষণা লিবিয়াতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তবরুকে অবস্থিত লিবিয়ান প্রতিনিধি পরিষদের (সংসদ) সদস্য মোহাম্মদ আল-দারাত ঘোষণাটিকে পাত্তাই দিতে চান না। তাঁর সাফ কথা, গাদ্দাফীদের শাসনের চির অবসান ঘটেছে। ও আর ফিরবে না। সাইফ যে ক্ষমতায় ফিরতে চান, তা সেই বিপ্লবের পয়েন্টটা কী?
তিনি আরো বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কোনোটিই তাকে সমর্থন দিতে আগ্রহী নয়। কারণ পুরনো শাসন শেষ হয়েছে। বিশ্ব এখন ব্যক্তিবিশেষের চাইতে আপন স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।
তবে মোহাম্মদ আল-দারাতের ধারায় চিন্তা করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক কামাল আল-মেরাশ। তাঁর চিন্তা ভিন্ন। তাঁর মতে, সব লিবিয়ানকে এক ঝুড়িতে রাখা ঠিক হবে না। কেউ-কেউ যেমন সাইফের বিরোধিতা করবে, কেউ-কেউ আবার সমর্থনও করবে।
তিনি বলেন, কোনো আঞ্চলিক শক্তি সাইফকে সরাসরি সমর্থন না-করলেও লিবিয়ার তাঁর জনপ্রিয়তার দিক বিবেচনায় রেখে কোনো-কোনো দেশ তাঁর প্রার্থিতার বিরোধিতাও করবে না।
কামাল আল-মেরাশের এ চিন্তাধারার সাথে একমত প্রতিনিধি পরিষদের আরেক সদস্য সালেহ আফিহিমা। স্বপক্ষত্যাগী জেনারেল খলিফা হাফতারের ”অপারেশন ডিগনিটি””র সমর্থক সালেহ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, একজন লিবিয়ান হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটা সাইফের সাংবিধানিক অধিকার – আদালতের কোনো বিধিনিষেধ না-আসা পর্যন্ত এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
২০১৩ সালে পাস করা এক আইনবলে গাদ্দাফী আমলের কোনো কর্মকর্তার সরকারি পদ গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ২০১৫ সালে আইনটি রদ করা হয়।
লিবিয়ান প্রতিনিধি পরিষদের প্রেসিডেন্ট আগুইলা সালেহ বলেন, যেহেতু আইনটি তিন বছর আগেই রদ হয়ে গেছে, তাই লিবিয়ার একজন নাগরিক হিসেবে সাইফের নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই। আইনের কোনো বাধা না-থাকলে নির্বাচনে কাকে বেছে নেবে, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার লিবিয়ানদের হাতে।
প্রতিনিধি পরিষদের আরেক সদস্য সালেহ আফিহিমা মনে করেন, লিবিয়ানদের এখন প্রয়োজন হচ্ছে সাবেক শাসকদেরও লিবিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নেয়া। কেননা, অসহিষ্ণুতা জাতীয় পুণরেকত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
উল্লেখ্য, চার দশকব্যাপী লিবিয়া শাসনের পর ২০১১ সালে গাদ্দাফীকে হত্যা করে বিদ্রোহীরা ক্ষমতা দখল করে। এর পরপরই চরম বিশৃঙ্খলায় নিপতিত হয় দেশটি। এখন সেদেশে তিনটি সরকার – দু’টি ত্রিপলিতে, একটি তবরুকে। গাদ্দাফী শাসনের অবসান ঘটলেও দেশটির অনেক গোত্র এখনও গাদ্দাফীর প্রতি অনুগত এবং তাঁর শাসনের সমর্থক, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং রাজধানী ত্রিপলীর ওয়ারশেফানা অঞ্চলে। এছাড়া গাদ্দাফীর জন্মস্থান সির্তে-র অনেক গোত্রই এখনও তাঁর প্রতি অনুগত।
তারপরও প্রশ্ন উঠছে, সাইফ গাদ্দাফী কি নির্বাচনে লড়ার যোগ্য হবেন? এ প্রশ্ন ওঠার কারণ হচ্ছে, ২০১১ সালের ”ফেব্রুয়ারি বিপ্লব”কালে বিক্ষোভকারীদের ওপর গণহত্যাসহ আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির দায়ে ত্রিপলির একটি আদালত সাইফকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে তাঁর দণ্ড মওকুফ করা হয় এবং তিনি সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান।
ত্রিপলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ বারা এ প্রসঙ্গে বলেন, সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পাওয়া কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, এ সিদ্ধান্ত আদালতই দিতে পারেন। অথবা প্রতিনিধি পরিষদ একটি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে তাঁকে দায়মুক্তি দিতে পারে। তবেই তাঁর নির্বাচনে আসা উচিৎ। সূত্র : আল জাজিরা